রাজশাহী ঘুরে দেখার মত
1. পদ্মার পাড়
রাজশাহী শহরের পদ্মা নদী বরাবর একটি মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য ফুটে ওঠে। এই পাড়ে দাঁড়িয়ে নদীর বিশালতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বিশেষ করে শীতকালে পদ্মার পানিতে ভেসে ওঠা পাখিদের পালক, ঘাস ও তৃণের মাঝে সূর্যাস্তের দৃশ্য আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। পদ্মার পাড়ে ঘুরতে আসা পর্যটকরা এখানকার শান্ত পরিবেশ ও নদী তীরবর্তী গ্রাম্য জীবন উপভোগ করে। নদীটির পাশেই রয়েছে বহু ঐতিহাসিক স্থান ও পুরনো মন্দির, যা রাজশাহীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষী। এখানকার পরিবেশ স্থানীয় মানুষদের জন্য একটি প্রধান জীবিকা সৃজন করে।
2. টি-বাঁধ পর্যটন কেন্দ্র
রাজশাহীতে অবস্থিত T-Bad একটি আধুনিক রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফে যা স্থানীয়দের এবং পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। এখানে অতিথিদের জন্য নানা ধরনের খাবার, চা, কফি এবং স্ন্যাকস পরিবেশন করা হয়। T-Bad-এর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা খুবই মনোরম, যেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আড্ডা দেওয়া যায়। বিশেষত, এই ক্যাফে টেকওয়ে সেবা এবং পার্টি আয়োজনের সুযোগও রয়েছে। এছাড়া, এখানকার খাবারের মান এবং সেবার গুণগত মান পর্যটকদের আকর্ষণ করে। রাজশাহীতে T-Bad একটি আধুনিক কফি হাউস হিসেবে পরিচিত এবং শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এটি খুবই জনপ্রিয়।
3. বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক স্থান যা বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির নানা নিদর্শন ধারণ করে। এটি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এখানে রাজশাহী অঞ্চলের প্রাকৃতিক ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং কৃষি উন্নয়নের নানা দিক প্রদর্শিত হয়। জাদুঘরে পাওয়া যায় প্রাচীন মূর্তি, কয়েন, অস্ত্র, পুঁথি এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপকরণ। এছাড়া, বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি এবং ভূমির নানা বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি শিক্ষামূলক স্থান, যেখানে তারা ইতিহাস ও সংস্কৃতির সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ পায়।
4. বাঘা মসজিদ
রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় অবস্থিত বাঘা মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, যা বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য উদাহরণ। ১৫৫৬ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে নির্মিত এই মসজিদটি ৬টি গম্বুজ এবং ৭টি আর্চযুক্ত দরজা সহ একটি সুন্দর কাঠামো। এর সৌন্দর্য এবং স্থাপত্যশৈলী মসজিদটিকে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র করে তুলেছে। মসজিদটির প্রাঙ্গণে রয়েছে একটি বড় মাদ্রাসা এবং চারপাশে নির্মিত দেয়াল, যা ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। বাঘা মসজিদ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে রাজশাহীর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত।
5. হাজার দুয়ারি জমিদারবাড়ি
রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, যা ১৮শ শতকে নির্মিত। এই প্রাসাদটি প্রাচীন বাংলার জমিদারি শাসনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাড়িটির নামকরণ "হাজার দুয়ারি" এর হাজারটি দরজার কারণে, যদিও এর বাস্তব সংখ্যা বেশি নয়। প্রাসাদটি বহু কামরা ও গ্যালারির সমন্বয়ে গঠিত এবং এর চারপাশে রয়েছে সুবিশাল বারান্দা ও আঙিনা। এর স্থাপত্যশৈলী বাংলা এবং মুঘল শিল্পের মিশ্রণ, যা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। আজও এটি রাজশাহীর ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত, যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নিদর্শন পাওয়া যায়
6. পুঠিয়া রাজবাড়ী
রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত পুঠিয়া রাজবাড়ি একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বসম্পন্ন স্থাপনা। ১৮শ শতকে রাজবাড়িটি নির্মিত হয় এবং এটি ছিল পুঠিয়ার জমিদারদের আবাসস্থল। রাজবাড়িটির মধ্যে রয়েছে বিশাল আঙিনা, বারান্দা এবং প্রাসাদের বিভিন্ন অংশ, যা ঐতিহ্যবাহী বাংলার স্থাপত্যশৈলীর প্রতিফলন। এর চারপাশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মন্দির এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনাও। পুঠিয়া রাজবাড়ি আজও এক অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে পরিচিত, যেখানে প্রাচীন শিল্পকর্ম, স্থাপত্য এবং সংস্কৃতি দেখা যায়। এটি রাজশাহীর ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে স্থান পেয়েছে।
7. রুয়েট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল ও প্রযুক্তি (রুয়েট) বাংলাদেশের একটি প্রধান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, যা ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি রাজশাহী শহরের একটানা সবুজ পরিবেশে অবস্থিত এবং ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, এবং প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদান করে। রুয়েটের আধুনিক ক্যাম্পাস, অত্যাধুনিক সুবিধা, গবেষণাগার এবং শিক্ষকদের উৎকৃষ্টতা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রের নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কাজ করছে। রুয়েট-এর শিক্ষাগত মান ও কার্যক্রম দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে, যা রাজশাহীর শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
8. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, যা ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি রাজশাহী শহরের outskirts-এ সুন্দর ক্যাম্পাসে অবস্থিত। রাবি দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি, যেখানে ৫০টিরও বেশি বিভাগ এবং বিভিন্ন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান, মানবিক বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন, এবং প্রকৌশলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চমানের শিক্ষা প্রদান করে। রাবি শিক্ষার গুণগত মান, গবেষণা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সমৃদ্ধ শিক্ষাক্রমের জন্য বিখ্যাত। ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, খেলাধুলা ও সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের উন্নতির জন্য সহায়ক।
9. রাজশাহী কলেজ
রাজশাহী কলেজ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি রাজশাহী শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরের শিক্ষার জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য ও অন্যান্য বিষয়ে উৎকৃষ্ট শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে। কলেজটি তার শৃঙ্খলা, উচ্চমানের শিক্ষকগণ এবং আধুনিক শিক্ষাক্রমের জন্য পরিচিত। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, শিক্ষার গুণগত মান এবং ক্যাম্পাসের সুন্দর পরিবেশ এটিকে রাজশাহীর অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগও এখানে রয়েছে।
10. সাফিনা পার্ক
রাজশাহী সাফিনা পার্ক একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র, যা শহরের বাইরে অবস্থিত। এটি শহরের বাসিন্দাদের জন্য এক শান্তিপূর্ণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশে অবসর কাটানোর সুযোগ দেয়। সাফিনা পার্কে রয়েছে সুদৃশ্য ফুলের বাগান, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ, হাঁটাচলার জন্য পাকা পথ এবং জলাশয়। এছাড়া, পার্কে পিকনিকের জন্যও স্থান রয়েছে, যা পরিবার ও বন্ধুদের জন্য আদর্শ স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিষ্কার পরিবেশ এখানে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সাফিনা পার্ক রাজশাহীর অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, যেখানে স্থানীয়রা এবং পর্যটকরা তাদের সময় উপভোগ করেন।
11. রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা
রাজশাহী চিড়িয়াখানা শহরের একটি জনপ্রিয় প্রাণী উদ্যানে, যা রাজশাহী শহরের উত্তরাংশে অবস্থিত। এটি শিশু ও পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি আদর্শ দর্শনীয় স্থান। চিড়িয়াখানাটিতে বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি যেমন বাঘ, সিংহ, হরিণ, গাধা, বানর এবং নানা ধরনের পাখি দেখতে পাওয়া যায়। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাণীদের স্বাভাবিক আচরণ পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ, যা শিক্ষামূলক এবং বিনোদনমূলক। চিড়িয়াখানার পরিচ্ছন্নতা এবং সুচিন্তিত ডিজাইন দর্শনার্থীদের আনন্দ প্রদান করে। এটি রাজশাহীর অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান, যেখানে পরিবার ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ও আনন্দের মিশ্রণে সময় কাটান।
12. জিয়া পার্ক
রাজশাহী শহরের জিয়া পার্ক একটি জনপ্রিয় বিনোদন স্থান, যা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এটি একটি বড় আঙিনা ও সুন্দর পরিবেশ নিয়ে গড়ে ওঠা পার্ক, যেখানে বিশ্রামের জন্য বিভিন্ন বেঞ্চ, হাঁটার পাথ এবং ফুলের বাগান রয়েছে। পার্কটির মধ্যে রয়েছে একটি ছোট লেক, যেখানে শিশুদের জন্য নৌকা চালানোর সুযোগও থাকে। এখানে পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে আসা যায়, এবং পিকনিক, আড্ডা বা একাকী সময় কাটানোর জন্য আদর্শ স্থান। জিয়া পার্ক রাজশাহীর অন্যতম প্রধান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভও হিসেবে পরিচিত, যা শহরের বাসিন্দাদের জন্য শান্তিপূর্ণ এবং আনন্দদায়ক একটি স্থান।
জাহিদ হেল্প কেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url